অনন্য এক অনলাইন প্লাটফর্ম কিশোর বাতায়ন

03 September, 2018

কিশোর-কিশোরীদের মনন, বুদ্ধি, চিন্তাধারা, ধারণা, চেতনা, চৈতন্য বিকাশে ও আধুনিক বিজ্ঞান মনস্ক প্রজন্ম গঠনে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে এটুআই। অনলাইন প্লাটফর্ম কিশোর বাতায়ন তার একটি উদাহরণ।



বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে ঢাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের  শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে এটুআই ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে  গত ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘একুশ শতকের দক্ষতা অর্জনে কিশোর বাতায়ন’  শীর্ষক সেমিনার।

কিশোর-কিশোরীরাই আগামীদিনের নাগরিক ও দক্ষ  জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে। তাই তাদের মনন, বুদ্ধি, চিন্তাধারা, ধারণা,  চেতনা, চৈতন্য বিকাশে ও আধুনিক বিজ্ঞান মনস্ক প্রজন্ম গঠনে নানামুখী কাজ  করে যাচ্ছে এটুআই। অনলাইন প্লাটফর্ম কিশোর বাতায়ন তার একটি উদাহরণ।  শিক্ষার্থীদের প্রশান্তি, বিনোদন, মেধা বিকাশ ও সৃজনশীলতা চর্চার এক অনলাইন  প্লাটফর্ম হলো কিশোর বাতায়ন। দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের  পরামর্শক্রমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগ,  বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এবং এটুআইয়ের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে কিশোর  বাতায়ন। এখানে ১২-১৯ বছরের কিশোর-কিশোরীদের জন্য রয়েছে পাঠ্যপুস্তক সহায়ক  উপকরণ, বই, শিশু চলচ্চিত্র, বিজ্ঞান বিষয়ক কমিক্স, মাথা খাটাও, হাতে কলমে  বিজ্ঞানের পরীক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা, বই ,  জীবনদক্ষতাসহ খবর-দার এর মতো নানা শিক্ষা সামগ্রী। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া  কিশোর বাতায়নের সদস্য সংখ্যা এরমধ্যে ২ লাখ ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যারা  নিয়মিত কিশোর বাতায়নে তাদের মতামত এবং কনটেন্ট শেয়ার করছেন।

কিশোর বাতায়নের বিশেষ দিকগুলো হলো এখানে শিক্ষার্থীরা বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা  চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে সৃজনশীল কনটেন্ট আপলোড করতে পারে। এর মাধ্যমে  প্রত্যন্ত ও শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের বৈষম্য দূর হচ্ছে,  শিক্ষার্থীদের জন্য সুস্থ ও নিরাপদ বিনোদনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে  শিক্ষার্থীদের সুন্দর মনন এবং গঠনমূলক সমালোচনা ও বিষয়বস্তু বিশ্লেষণে  সক্ষমতা বাড়ছে। বিজ্ঞান শিক্ষার আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে  কিশোর বাতায়ন।

বছরজুড়ে কিশোর বাতায়নে চলে নানা কর্মসূচি  ২০১৭ সালের শেষভাগ জুড়ে ছিল ‘আমার জেলা, আমার অহংকার’ প্রতিযোগিতা, যেখানে  বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা থেকে নিজ জেলা সম্পর্কে প্রায় ১০ হাজারের বেশি  প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। এসময় কিশোর বাতায়নে লেখালেখির ওপর কনটেন্ট আপলোড  হয় প্রায় ২ হাজার, হাতে আঁকা ছবি ১ হাজার ৬শ, ক্যামেরায় তোলা ছবি ৫ হাজার,  অডিও ও ভিডিও ডকুমেন্টরি ১ হাজার।

কিশোর বাতায়নে খুব সহজে  মোবাইলে ধারণকৃত একটি মুভি আপলোড করার যেমন সুযোগ আছে, তেমনি বিজ্ঞানের  কোনো এক্সপেরিমেন্টের ভিডিও করে শেয়ার করার সুযোগ রয়েছে। ছবি তুলে বা  কার্টুন/ছবি এঁকেও মতামত শেয়ার করার সুযোগ রাখা হয়েছে এতে।

 মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ভাষার মাস হিসেবে পুরো  ফেব্রুয়ারি জুড়ে চলে ‘বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে, বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে’  স্লোগান নিয়ে অনলাইন বই পড়া প্রতিযোগিতা এবং কৈশোরে বঙ্গবন্ধু, আমার কৈশোর,  আমার স্বাধীনতা বিষয়ক ডিজিটাল কনটেন্ট প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে ৫ হাজার  শিক্ষার্থীর হাতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও এটুআই পুরস্কার হিসেবে বই  তুলে  দেয়। এছাড়া অন্যরকম বিজ্ঞানবক্সের উপহারও তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজকের  শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলার একটি মাধ্যম কিশোর  বাতায়ন। কিশোরদের দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে কিশোর বাতায়নের ভূমিকা হবে  আধুনিক, অভিনব, বাস্তব, অনুশীলন ভিত্তিক ও একুশ শতকের চাহিদাভিত্তিক ও  সময়োপযোগী। ব্যক্তিগত ও সামাজিক দক্ষতার বিকাশ ঘটবে কিশোর বাতায়নের  মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির অহংকার।

অনন্য এক অনলাইন  প্লাটফর্ম কিশোর বাতায়ন শিক্ষার্থীদের সামনে সৃজনী ভাবনার ক্ষেত্রে একটি  নতুন দ্বার উন্মোচন করবে এসব তথ্য ‘একুশ শতকের দক্ষতা অর্জনে কিশোর বাতায়ন’  শীর্ষক সেমিনারে উঠে আসে। এছাড়া সেমিনারে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আর কী কী  সেগমেন্ট কিশোর বাতায়নে অন্তর্ভুক্তি হতে পারে সে বিষয়ে মতামত প্রদান করেন।

সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ  জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক শিক্ষার্থীদের মনোযোগকে নষ্ট করে দিচ্ছে, এ  নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি। ওদের বয়সের কোনো জিনিস নেই কোথাও, নেই তাদের  উপযোগী কনটেন্ট।’ এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়  কমিশনার (প্রোগ্রাম) বাংলাদেশ স্কাউট মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান রিপন, জাতিসংঘ  পপুলেশন ফান্ডের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ডাক্তার মোহাম্মদ মুনির হোসেন,  ই-লার্নিং স্পেশালিস্ট প্রফেসর ফারুক আহমেদ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের  যুগ্ম-পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব  করেন এটুআইয়ের এডুকেশনাল টেকনোলজি এক্সপার্ট রফিকুল ইসলাম সুজন।

-------------

চন্দন বর্ম্মণ

সূত্রঃ ইত্তেফাক 


মন্তব্য লিখতে লগইন অথবা রেজিস্ট্রেশন কর