বাল্যবিয়ে রুখতে ফুলবাড়ীর কিশোরীরা
01 October, 2018
লিখেছেন- আব্দুল আজিজ মজনু
‘বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও একসঙ্গে’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক কিশোরী বাইসাইকেল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
প্রথম হয় নগরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সোমা রাণী, দ্বিতীয় ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইশরাত জাহান ও তৃতীয় উত্তর শিমুলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের নাজমুন্নাহার।
বাইসাইকেলে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণ করার ইচ্ছে : সোমা রানী
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর নগরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোমা রানী। তিন বোনের সবার ছোট সে। বাবা রতন চন্দ্র সরকার স্কুল শিক্ষক। মা চন্দনা রানী গৃহিণী। গ্রামের আঁকা-বাঁকা পথ ধরে হেঁটে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসতে দেরি হতো ওর। বিদ্যালয়ে হেঁটে না এসে সাইকেলে এলে সময়মতো ক্লাস করতে পারবে। বাবা-মায়ের পাশাপাশি বড় বোনের সহযোগিতায় সাইকেল চালাতে শিখে যায় সোমা। এখন আর বিদ্যালয়ে যেতে দেরি হয় না তার।
এ প্রসঙ্গে সোমা রানী বলেন, আমরা আমাদের অধিকার রক্ষায় বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস প্রজেক্টের সঙ্গে কাজ করছি। এবারে আমি বাল্যবিয়ে রুখতে ফুলবাড়ীতে কিশোরীদের সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছি।
তারা আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করছে এটা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আমাদের দেশের নারীসমাজ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরও সজাগ হবেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাইসাইকেলে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণ করার ইচ্ছা আছে আমার। একজন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।
পুলিশের চাকরি নিয়ে সেবা করব : ইশরাত জাহান
বাবা ফজলু হক একজন কৃষক। মা হাসনা বেগম গৃহিণী। চার বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ইশরাত জাহান (আঁখি আনজুম)। ফুলবাড়ী সীমান্ত ঘেঁষা তাদের বাড়ি। ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও। পড়াশোনায় মেধাবী। রোল নম্বর ৪ হলে কি হবে তার?
বাবা-মায়ের উর্পাজনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পড়ালেখার প্রতি তার প্রচণ্ড ঝোঁক। ইশরাত জাহান (আঁখি আনজুম)-এর মতে, নিজের ইচ্ছায় বাইসাইকেল চড়ে ৪ কিমি. রাস্তা পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসি। মেয়েদের তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। পড়ালেখা শেষে পুলিশের চাকরি নিয়ে পরিবার ও সমাজের সেবা করব।
সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই : মোছা. নাজমুন্নাহার
উপজেলার উত্তর শিমুলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোছা. নাজমুন্নাহার। বাবা নুর মহাম্মদ আলী শেখ। স্থানীয় টেপরির বাজারে বাইসাইকেল মেকার। মা মরিয়ম গৃহিণী। তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে ও তৃতীয়। বড় বোন নুর-নাহার ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের বিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। ভাই মাজহারুল ইসলাম এসএসসি পাশ করে ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করেন। নাজমুন্নাহারও জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। অনেক কষ্টে দুই বোন তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোছা. নাজমুন্নাহার জানান, ও বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস প্রজেক্টের সহযোগিতায় গ্রামে কাজ করছে। অন্যদিকে চাচা রুহুল, বড় বোন নুর-নাহারের কাছে বাইসাইকেল চালানো শিখেছে।
সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পাশাপাশি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় গ্রামের মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করার কাজটিও চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এটাই শেখানো হচ্ছে কিভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা যায়। ও স্বপ্ন দেখে ডাক্তার হওয়ার। গরিব দিনমজুর বাবার পক্ষে মেয়েকে একজন চিকিৎসক তৈরি করা খুবই কঠিন। এরপরও সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় ও।
মন্তব্য লিখতে লগইন অথবা রেজিস্ট্রেশন কর