ঢাকা শহরের নানা কষ্ট আর অব্যবস্থাপনা

28 July, 2017


ঢাকা শহরের নানা কষ্ট আর অব্যবস্থাপনা নিয়ে ইংরেজিতে ভালো-মন্দ লেখা বাদ দিয়েছি বহুদিন হল। কারণ এতে দেশের বদনাম হয়। বিদেশীরা ফেসবুকে সে লেখা পড়ে ঢাকা নিয়ে, আমাদের নিয়ে তাচ্ছিল্যের ধারণা পোষণ করে। নিজেকে ছোট করতে কে চায় বলুন? কিন্তু বাংলায় লিখে মেয়র এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা আমাদের করতেই হবে। আমরা শুধু কষ্টই পেতে পারি। সমাধানের ক্ষমতা রাখেন একমাত্র আমাদের জনপ্রতিনিধিরা। কত রকমের কষ্ট আর বিড়ম্বনা সহ্য করে রাজধানী ঢাকায় মানুষ বসবাস করছে তার কোনো হিসেব কি নগরপিতাদের কাছে আছে? একটি গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রের সাধারণ নগরবাসীর জন্য অতি প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধার একটাও কি আছে এখানে? নেই। দুই কোটি মানুষের শহরে ৪/৫ হাজার পাবলিক বাস চালু আছে বর্তমানে! রাস্তার দিকে তাকালেই গণপরিবহন এর সংকট পরিষ্কার হয়ে যায়। রাস্তায় শুধু প্রাইভেট কার আর রিকশা। পাবলিক বাস খুব কম চোখে পড়ে। অন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিসতো দূর অস্ত। মেট্রো রেলের অপেক্ষায় আছি আমরা। কিন্তু ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে গিয়ে নির্মাতারা সাধারণ মানুষকে যেভাবে কষ্ট দিয়ে চলেছেন তাতে মেট্রো রেলের প্রজেক্ট কতখানি নির্বিঘ্ন হবে তাতে সন্দেহ আছে নগরবাসীর। এরপরেও এই কষ্টের নগরীতে মানুষের স্বপ্নের শেষ নেই। 

প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ দূর-দুরান্ত থেকে এই শহরে নানা স্বপ্ন নিয়ে ভিড় করছেন। স্বপ্ন পূরণে কেউ সফল হচ্ছেন, কেউ বা স্বপ্নের দাস হয়ে আত্মসমর্পণ করে মেনে নিয়েছেন কষ্টে যাপিত জীবন। এই ইট-পাথর আর ময়লা-আবর্জনার জঙ্গলে যাদের গাড়ি আছে তারাই কেবল একটু ঘাম-গরম থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে নগরীতে চলাচল করতে পারছে। এই গাড়িওয়ালারা পর্যন্ত ফেসবুকে কষ্ট নিয়ে নানা পোস্ট দিয়ে চলেছে। গাড়ি থেকেও লাভ হচ্ছেনা তাদের। কারণ যানজট। প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে মানুষের। ১০ মিনিটের রাস্তা মানুষ দুই তিন ঘণ্টাও পার হতে পারছেনা। বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি ছেড়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সুযোগও খুব কম। ফুটপাত হয় ছোট-খাট ব্যবসায়ীদের দখলে, নয়তো নানা জায়গায় ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা। আর সবখানে মানুষের ভিড়, হাউকাউ তো আছেই।

 ঢাকা আমাদের জন্য কতখানি বিপদজনক হয়ে উঠেছে, আমরা কতখানি অবহেলিত তা একটা উদাহরণ দিলেই ক্লিয়ার হবে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবাগঘেঁষা দেয়াল ধ্বসে সেদিন এক নারী মারা গেলেন। সামান্য বৃষ্টিতে দেয়াল ধ্বসের ঘটনা ঘটেছিল। দেয়ালের যে অংশটা এখনো ধ্বসে যায়নি, সেখানে সিটি কর্পোরেশন কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেউ একটা সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড লাগানোরও দরকার মনে করেননি। একজন মানুষ এভাবে মারা গেল, কেউ একটু দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত করলেন না! নগরপিতারা হয়তো বলবেন, উনারা হেন করেছেন, তেন করেছেন। আদতে কিছু ফুটপাত আর দু একটি ট্রাক/বাস স্ট্যান্ড ক্লিয়ার করা ছাড়া এই বিশাল ইট-পাথর জঙ্গলের আর কিছুই তারা পরিষ্কার করতে পারেননি। গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিন্দুমাত্র ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেননি দুই মেয়র। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা-রাতে গণমানুষের পরিবরহন-যাতনার এতটুকু হ্রাস করাতে সক্ষম হননি দুই নগরপিতার কেউই। হতদরিদ্র কিছু বিআরটিসি বাস ছাড়া পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে কিছু নেই রাজধানীতে। কয়েকটি দূতাবাস কর্তৃক দখলকৃত ফুটপাত আর তেজগাঁও এর ট্রাক স্ট্যান্ড, গাবতলির বাস স্ট্যান্ড পরিষ্কার করে দারুণ মিডিয়া কাভারেজ পেয়ে উত্তরের মেয়র আনিসুল হক নিজেকে অনেক সফল ভেবে এতটাই অহংকারী হয়ে উঠেছেন, মানুষের ঘরে ঘরে মশারি টানাতে পারবেন না বলে তাচ্ছিল্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। মেয়র আনিসুল হক সাহেব জানেন না, এই মহানগরীর দুই কোটি মানুষের ১০/১২ শতাংশ বাদে সবাই নিজেদের পরিশ্রম আর ধৈর্যশক্তির বদৌলতে জীবিকা অর্জন করে চলেছেন। ঢাকার ইতিহাসের কোনো মেয়রই এখানে নিজেদের কোনোরকম কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন না। আর আনিসুল হক আর সাইদ খোকন তো দায়িত্বে এসেছেন মাত্র দুই বছর। দুই বছরে মেয়র সাহেবরা সব কিছু করতে ফেলবেন সেটা এই ঢাকা শহরের একজন রিকশাওয়ালাও আশা করেনা। নিজেদের অক্ষমতা বা ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে গেলে যে কেউ ছোট হবেন না, এ কথা মনে হয় আমাদের জনপ্রতিনিধিদের কারোরই বোধগম্য নয়। মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের সময় যে প্রতিশ্রুতির বাণীসমূহ শুনিয়েছিলেন সেগুলোর রেকর্ড একটু পুনরায় বাজিয়ে শুনলে হয়তো একটু স্মৃতি ফিরে আসতে পারে। 

চিকুনগুনিয়া ঢাকায় মহামারি আকার ধারণ করেছে মর্মে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু হয়েছে কমপক্ষে দুইমাস আগে, অথচ মেয়র কিংবা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেউই এই সত্যটি স্বীকার করলেন না। মূলধারার গণমাধ্যমে বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে নিউজ প্রচার হওয়ার পরই কেবল দুই মেয়র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটু মনোযোগ দেন মশার দিকে। কিন্তু তারা করছেন কী? মানুষকে সচেতন হতে বলছেন। ঘরে ঘরে মশারি টানাতে পারবেন না বলে হুংকার দিচ্ছেন। স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে র‍্যালি করছেন। পরিষ্কার, ফাঁকা ভালো রাস্তায় মশার ওষুধ ছিটিয়ে টেলিভিশনের কাভারেজ নিচ্ছেন। মশার ওষুধে অনেকক্ষেত্রে মশা সামান্য একটু বেহুঁশ হচ্ছে, মরছেনা বলেও খবর বেরিয়েছে। মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য বারবার আহবান জানাচ্ছেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা কতটুকু সচেতন রাজধানী নিয়ে?


মন্তব্য লিখতে লগইন অথবা রেজিস্ট্রেশন কর