slot gacor slot gacor terbaik slot gacor thailand slot gacor 2024
'; Blog Details

রক্তদান করুন - নিজে ভালো থাকুন

স্বেচ্ছায় রক্তদান একটি মহৎ কাজ

১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন, পর্দার আড়ালে থাকা সেসব মানুষকে এবং যারা রক্তদানে ভয় পায় তাদের ভয় দূর করে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির একটা প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘Donating blood is an act of solidarity. Join the effort and save lives’.

১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে প্রথম পালিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক রক্তদাতা দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়।

অস্ট্রিয়ার বংশোদ্ভূত জীববিজ্ঞানী কার্ল ল্যানস্টেইনার ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের জনক। ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন তিনি জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯০০ সালে মতান্তরে ১৯০১ সালে ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম আবিষ্কার করেন। তার এই আবিষ্কার উন্মোচন করে দিয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিশাল অধ্যায়। এর আগে রক্তদানের বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না। তিনি ১৯৩০ সালে এবিও ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রাইজ পান। তার জন্মদিনে তাকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে ১৪ জুন উদযাপন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।

এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করা, স্বেচ্ছায় রক্তদানে সচেতন করা, ভয় দূর করা, নতুন নতুন রক্তদাতা তৈরি করা এবং নিরাপদ রক্ত ব্যবহারে উৎসাহিত করা। এ দিবস পালনের আরও উদ্দেশ্য দেশের জনগণকে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ হেপাটাইটিস্ বি, হেপাটাইসিস্ সি, এইডস্, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়া রোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য স্বেচ্ছা রক্তদান ও রক্তের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

প্রতিবছর আট কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়, অথচ এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের উপর, আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্তদান করে আসছে রোগীদের। অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, নিরাপদ রক্ত সরবরাহের মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ যেমন-এইডস্, হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি সহ অন্যান্য রক্তরোগ সংক্রমনের আশংকা খুবই কম।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। তবে আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। আমাদের দেশের রক্তদাতার প্রধান উৎস হলো রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা রিলেটিভ ডোনার। যেমন- আপনার প্রয়োজনে আপনার আত্মীয়-স্বজর এসে রক্ত দিল। আর স্বেচ্ছায় রক্তদান হয়তো নির্দিষ্ট সময় পর পর, কে রক্ত পাবে, কোথায় যাবে, কি হবে কিছুই সে জানতে পারবে না। আমাদের দেশে বছরে প্রায় ১৪ লক্ষ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। বিশ্বের প্রায় ৬২টি দেশে শতভাগ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছা রক্তদানের হার প্রতি এক হাজারে ৪৫ জন আর বাংলাদেশ তথা উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি হাজারে ৪ জনেরও কম। বাংলাদেশে ঘাটতি পূরণ ও অনিরাপদ রক্তের ব্যবহার বন্ধ করতে বর্তমানের চেয়ে বছরে মাত্র ৫ লক্ষ ব্যাগ অতিরিক্ত সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার তুলনায় রক্তের চাহিদা প্রতিবছর প্রায় ১৪ লাখ ইউনিট। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের রক্তদাতার সংখ্যা খুব সামান্য। ৬ থেকে ৭ লাখ লোক যদি বছরে দুইবার অন্তত রক্তদান করে তাহলেই এ ঘাটতি পুরণ হয়ে যাবে। দেশে একক রক্তদাতার সংখ্যা বেশি থাকলেও বহুবার রক্ত দিয়েছেন এমন দাতার সংখ্যা অনেক কম।

আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রক্তের চাহিদা বেশি কিন্তু এসব উন্নয়নশীল দেশেই স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীর সংখ্যা কম। আমাদের বেশির ভাগের মনে রক্তদানের ক্ষেত্রে ‘ভয়’ বাধা হিসাবে কাজ করে। ১৯৫২, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালে রক্ত ঝরানো জাতির কাছে “মোটা সুই” এর অযৌক্তিক ভয় মোটেই কাম্য নয়। প্রত্যেক সুস্থ্য ব্যক্তির উচিত স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসা। কারন নিরাপদ রক্ত সরবরাহের মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান।

রক্ত মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পূর্ণমাত্রায় রক্ত থাকলে মানব দেহ থাকে সজীব ও সক্রিয়। আর রক্তশূণ্যতা বা এনিমিয়া দেখা দিলেই শরীর অকেজো ও দূর্বল হয়ে প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়ে। আর এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কারখানায় তৈরি হয় না। বিজ্ঞানীদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও রক্তের বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি, নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে এমনটাও আসা করা যায় না। মানুয়ের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়, জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার রক্তই লাল। এর মধ্যে কোন বিভেদ নেই। মানুষের শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তা এত বেশি যে, রক্ত ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে প্রায়ই জরুরী রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। যেমন- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, রক্তবমি বা পায়খানার সংগে রক্ত গেলে, দুর্ঘটনায় আহত রোগী, আস্ত্রোপচারের রোগী, সন্তান প্রসব কালে, ক্যান্সার বা অন্যান্য জটিল রোগ, এনিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার ইত্যাদি রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া বর্তমানে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে, যা সফল করতে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়।

১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোন সুস্থ্য ব্যক্তি যাদের শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। একজন সুস্থ্য মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের ১০ ভাগের ১ ভাগ। রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দু’সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর প্রকৃতিক নিময়েই যেহেতু প্রতি ৪ মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে ৩ বার রক্ত দিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না বরং শরীরের লোহিত কণিকা গুলোর প্রাণ ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়।

একব্যাগ রক্ত দিয়ে শুধু একটি নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে তিনটি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। কেননা এক ব্যাগ রক্তকে এর উপাদান হিসেবে তিনভাগে ভাগ করে তিনজনের দেহে সঞ্চালন করা সম্ভব। উপাদানগুলো হলো- জবফ ইষড়ড়ফ ঈবষষ, চষধঃবষবঃ ্ চষধংসধ ড়ৎ ঈৎুড়ঢ়ৎবপরঢ়রঃধঃব. এক এক জনের জন্য এক একটি উপাদান প্রয়োজন হয়। তাই আপনার এক ব্যাগ রক্ত এক সংগে বাঁচাতে পারে তিনটি প্রাণ।

সামান্য পরিমাণ রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ। নিয়মিত রক্তদান করা একটি ভালো অভ্যাস। রক্তদান করা কোন দুঃসাহসিক বা অসম্ভব কাজ নয়, বরং এর জন্য একটি সুন্দর মন থাকাই যথেষ্ট। রক্তদানে শরীরের কোন ক্ষতি হয়ই না বরং নিয়মিত রক্তদান করলে বেশ কিছু উপকারও পাওয়া যায়। যেমন-

  • একবার ভাবুন আপনার এক ব্যাগ রক্তদানে একসংগে তিনজন মানুষের জীবন বেঁচে উঠছে। সে মুহূর্থে আপনার যে মানবিক তৃপ্তি তাকে কখনোই অন্য কোন কিছুর সংগে তুলনা করা সম্ভব নয়।
  • রক্তদাতা রক্তদান করলে জানতে পারেন তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভূগছেন কি না।
  • নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তদাতার হার্ট ভালো থাকে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
  • নিয়মিত রক্তদানে রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়। ফলে রক্তদাতার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির ঝুঁকি কমে যায়।
  • রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বাড়ে।
  • শরীরে রক্তকণিকা তৈরির কারখানা হলো অস্থিমজ্জা। নিয়মিত রক্তদান করলে অস্থিমজ্জা থেকে নতুন কণিকা তৈরির চাপ থাকে। ফলে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে। এতে যে কোন দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলেও শরীর খুব সহজেই তা পূরণ করতে পারে।
  • স্বেচ্ছায় রক্তদাতাকে একটি ডোনার কার্ড দেওয়া হয়। ওই কার্ড দিয়ে রক্তদাতা নিজে এবং নিজের পরিবার প্রয়োজনে আজীবন ওই প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত পেতে পারেন।
  • রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পুণ্যের কাজ ।

যারা নিজের জীবন বাজী রেখে রক্তদান করে মানুষের জীবন রক্ষা করেন, নিঃশ্বন্দেহে তারা অনেক বড় মনের মানুষ। রক্তদান আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বও বটে। এটা সম্পূর্ণ মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক কার্যক্রম। এর মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করে, এমনকি ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুতরাং আসুন, আমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠি একেকজন রক্তযোদ্ধা এবং রক্ত দিয়ে পৃথিবীর প্রানস্পন্দনে অবদান রাখি।

লেখক: সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল টু ভাইস চ্যান্সেলর এবং কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউ।

 

2
90
1 Comment

Comment

Your Opinion

Have you seen the blog? Share your opinion

Comments:

Image
Aronno Sami ৭ মাস আগে
জেনে উপকৃত হলাম