স্যানিটারি প্যাড এর যত কথা
মাসের এই বিশেষ দিনগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। খোলামেলা ভাবে এ নিয়ে কথা বলতে অনেকেই লজ্জা বা সংকোচ বোধ করে। সামাজিক কিছু বিধিনিষেধ বা কুসংস্কার ও এর জন্য দায়ী। তবে সুস্থ ও রোগ্মুক্ত থাকতে হলে, প্রজনন তন্ত্র কে সুরক্ষিত রাখতে হলে এ সম্পর্কে জানতে হবে এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। এই সময় পরিচ্ছন্নতার অভাবে নানা রকমের রোগ হতে পারে। আমাদের দেশে মেয়েদের ইউরিন ইনফেকশন খুব বেশি দেখা যায়, আর এটা বেশিরভাগ সময় অপরিচ্ছন্নতার কারনেই হয়ে থাকে। মাসিক চলাকালীন সময়ে খুব সহজেই মেয়েরা রোগে আক্রান্ত হয় শুধুমাত্র অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য। তাই আমাদের সবার উচিৎ পিরিয়ডকালীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ভালোভাবে জানা এবং সেটা নিয়ে সচেতন থাকা।
নিয়ম মেনে কেন চলতে হবে? মাসিক এর রক্ত কি দূষিত নাকি!!
আমাদের শরীর কিন্তু কখনোই সম্পুর্ন জীবানুমুক্ত থাকে না। আমাদের ত্বকে বা শরীরের ভেতরে নানা রকম জীবানু থাকে। শরীরের বিভিন্ন অংশের মতো যোনিপথেও স্বাভাবিকভাবেই কিছু জীবাণু বাস করে। এসব জীবাণু থাকার অর্থ কিন্তু সংক্রমণ নয়। যোনিপথে স্বাভাবিক ভাবে থাকা এসব জীবানুর চেয়ে মাসিক এর সময় যোনীপথে বের হওয়া রক্তের দিকেই বরং আমাদের নজর দিতে হবে।
রক্ত যে পথেই বের হোক না কেন, তা হাত কেটেই হোক আর মাসিক এর রক্তই হোক, তা খোলা পরে থাকলে তাতে জীবাণু বৃদ্ধি পায়, সংক্রমন ঘটার সম্ভাবনা থাকে। মাসিক এর রক্ত এ ক্ষেত্রে আলাদা করে দূষিত কোন কিছু নয়। এ ছাড়া জরায়ুমুখ মাসিকের সময় খানিকটা খোলা অবস্থায় থাকে (অন্য সময় যা বন্ধ থাকে) বলে যোনিপথ পেরিয়ে ভেতরের দিকেও সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ু, ডিম্বনালি, ডিম্বাশয়, এমনকি তলপেটের ভেতরের পর্দায়ও সংক্রমণ হতে পারে। তলপেটের ভেতর পুঁজ জমতে পারে, ডিম্বাশয়-ডিম্বনালির জায়গায় গোটা হতে পারে। তলপেটে ব্যথা, অনিয়মিত রক্তস্রাব, কয়েক দিন পরপরই যোনিপথে রক্তক্ষরণ, এমনকি বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাও (কম বয়সে এই পরিচ্ছন্নতা মেনে না চললে) হতে পারে। প্রস্রাবে সংক্রমণও হতে পারে। এ কারনে এসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরী।
স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড কি?
স্যানিটারি ন্যাপকিন বা স্যানিটারি প্যাড হচ্ছে মাসিক এর সময় বের হওয়া রক্ত ও অন্যান্য তরল শুষে নিতে পারে এমন কিছু বিশেষ বস্তু। এছাড়াও গর্ভপাত কিংবা অস্ত্রপাচারের কারনে মেয়েদের যোনীপথ থেকে বের হওয়া রক্ত ও অন্যান্য তরল শুষে নেয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
পিরিয়ডের সময় কার কতটুকু রক্ত ও তরল বের হবে তা কিন্তু এক এক জনের এক এক রকম। কারো কম, কারো বেশি। সময়কাল ও আলাদা। কারো মাসিক তিন দিন, কারো পাঁচ, কারো বা আবার চলতে পারে সাত দিন পর্যন্ত। কার কতটুকু রক্ত ও তরল বের হয় তার ওপর ভিত্তি করে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হয়। বাজারে এ কারনেই নানা ধরনের প্যাড পাওয়া যায়, লাইট, রেগুলার, হেভি ফ্লো ইত্যাদি নানা নামে এসব কিনতে পাওয়া যায়। সাধারণত পিরিয়ড ২৫-৩০ দিন পর পর হয় এবং শুরুর দিকে বেশীরভাগ সময় রক্ত ও তরলের পরিমান একটু বেশি হয়ে থাকে, শেষের দিনগুলোতে আবার কমে আসে। অনেকের দিনের বেলা কম ফ্লো থাকে কিন্তু রাতের বেলা সেই ফ্লো বেড়ে যায়। বিভিন্ন কোম্পানি আবার বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন সাইজের ও প্যাড বানিয়ে থাকে যেন তা নিম্নাঙ্গের শারীরিক গঠন এর সাথে মানানসই হয় ও কোনো লিকেজের সম্ভাবনা না থাকে। আপনার শরীরের গঠন অনুযায়ী ও রক্তের ফ্লো অনুযায়ী স্যানিটারি প্যাড কোনটি মানান সই তা খুঁজে নিন ও ব্যবহার করুন।
প্যাড কি কিনতেই হবে?
সাধারণত প্রতি ৬ ঘন্টা পর পর প্যাড পরিবর্তন করতে হয়। ফ্লো বেশি হলে এর আগেও পাল্টানোর দরকার হতে পারে। আর্থিক অসুবিধার কারনে অনেকের পক্ষেই প্যাড সবসময় দোকান থেকে কিনে পরা সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি ঘরেও প্যাড বানিয়ে নিতে পারেন। মনে রাখবেন এক্ষেত্রে অবশ্যই পরিষ্কার সুতি কাপড় ব্যবহার করবেন ও ব্যবহারের পর তা ভাল করে ধুয়ে ভাল ভাবে শুকিয়ে নেবেন। আপনার প্যাড এর সাইজ কেমন হবে বা কতটুকু মোটা হবে তা নির্ভর করবে আপনার শারীরিক গঠন ও রক্তের ফ্লো এর উপর। প্যাড হিসেবে সরাসরি তুলার ব্যবহার করবেন না। এছাড়া বাজারে বারবার ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ বান্ধব স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যায় যা আপনি ধুয়ে অনেকবার ব্যবহার করতে পারবেন।
বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে খুব অল্প দামে স্যানিটারি প্যাড পাওয়ার সুযোগ আছে। এছাড়াও এসব কেন্দ্র থেকে মাসিক ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরামর্শ ও দেয়া হয়। আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে ফোন করতে পারেন ১৬৭৬৭ নাম্বারে।
স্যানিটারী প্যাড এর বিকল্প কি আছে?
বাজারে স্যানিটারি প্যাড এর বিকল্প হিসেবে ট্যাম্পুন আর কাপ ও পাওয়া যায়। এর মধ্যে কাপ বেশি জনপ্রিয়। এই কাপ গুলো নরম একধরনের রাবারের তৈরি, খুব ছোট, ব্যবহার আরামদায়ক এবং একটি কাপ অনেকদিন ধরে ব্যবহার করে যায়। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আমাদের ব্লগ এ।
ভালো
Important docoment