সবাই বদলে যাচ্ছে কেন?
সাধারণত শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, যৌন ও সামাজিক পরির্বতনগুলো কৈশোরকালীন সময়েই ঘটে, যা তরুণদের আচরণকে প্রভাবিত করে। নতুন নতুন সম্পর্ক বিশেষ করে সমবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্ক কৈশোরে বেশি প্রাধান্য পায় এবং পারিবারিক প্রাধান্য কিছুটা হ্রাস পায়। কৈশোরকালীন কৌতুহল, যৌনচিন্তা, নতুন কিছু পরীক্ষা করে দেখার প্রবণতা, নিজেকে সবজান্তা মনে করার প্রবৃত্তি, আমার কিছু হবে না এমন মনোভাব, ধুমপান, মাদক ইত্যাদির ব্যবহার, বিপদজনক বিনোদনমূলক কাজ এবং সঙ্গীদের উৎসাহ কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের দিকে ধাবিত করে। এছাড়াও যে কোনো বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান ও পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব, সুদূরপ্রসারী ফলাফল সম্পর্কে ধারণা না থাকা ইত্যাদি বিষয় ঝুঁকিপূর্ণ আচরণকে প্রভাবিত করে।
কৈশোরে আবেগতাড়িত হয়ে দুঃসাহসী বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ: ধরণসমূহ এবং এর পরিণতি
- আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষতিকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
- বেপরোয়া আচরণ দূর্ঘটনা এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- ধুমপান, মাদক ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে তাতে আসক্ত হয়ে যেতে পারে। এতে অন্য দুঃসাহসী আচরণসমূহ যেমন- ভাল মন্দ যাচাই ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা যৌন আচরণ ইত্যাদিকে প্রভাবান্বিত করে।
- অরক্ষিত যৌন আচরণ তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত, মানসিক, মনস্তাত্বিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনে।
- মা-বাবা ও শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব না পেলে ও কৌতূহল নিবৃত্ত না হলে অথবা প্রশ্ন বা কৌতূহল নিবৃত্ত করতে দ্বিধা বোধ করলে, কিশোর-কিশোরীরা ভুল ও ক্ষতিকর তথ্যের সামনে পড়তে পারে।
- পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলে তারা হতাশাগ্রস্ত বা বিভ্রান্তিকর আচরণ করতে পারে এবং বিপথগামী হয়ে যেতে পারে।
- এ বয়সে কিশোর-কিশোরীরা আবেগপ্রবণ থাকে, ফলে অন্যরা তাদের এ দুর্বলতার সুযোগ নিতে চায়। কখনো কখনো তারা ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। অনেক সময় কিশোরদেরও এ বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
- যৌনতা বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়; যৌন কৌতুহলী হয়ে এ রহস্য জানার জন্য বিজ্ঞাপন, পর্ণো পত্রিকা, ইন্টারনেট, টিভি ইত্যাদি মাধ্যম থেকে পাওয়া অবাঞ্ছিত বিকৃত ব্যাখ্যাকে সত্য বলে মেনে নেয়।
- কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়, ফলে তাদের প্রতি অন্যেরা আকর্ষণ বোধ করে এবং তাদের উত্ত্যক্ত করে। এ কারণে কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পায় এবং চলাফেরা, আচরণ, স্কুলে যাওয়া ইত্যাদির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
- কিশোরীদের ভুলিয়ে, ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে পাচার করা হয়। কখনো-বা তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়।
- কৈশোর বয়সে প্রায়ই অর্পযাপ্ত ও অপুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে উঠে। শিশুবয়সের দূর্বল স্বাস্থ্য প্রায়ই তাদের আরো দূর্বল করে দেয়, যার প্রভাব কৈশোরে এমনকি তারপরও চলতে থাকে।
বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন সম্পর্কে সবারই যাবতীয় তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ কিশোর-কিশোরীদের এই তথ্যগুলো দিতে পারে। কোনো কোনো অভিভাবক মনে করেন, বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে আলোচনা করা ঠিক নয়। এটিকে তারা সামাজিক অনুশাসনের বিপরীত কাজ বলে মনে করেন। কিন্তু তাদের এই সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কিশোর-কিশোরীরা বয়ঃসন্ধিকালের বিষয়ে সঠিক তথ্য পেলে তারা বিভিন্ন ভুল ধারণা পেয়ে ক্ষতির শিকার হবে না। নিজেরা বুঝে চলতে পারবে। যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে।
good
good