জেন্ডার ! সে আবার কি?
জেন্ডার (Gender) শব্দটা শুনলেই আমাদের মাথায় চলে আসতে পারে বাংলায় লিঙ্গের কথা। পুংলিঙ্গ আর স্ত্রী লিঙ্গ। আসলে ঠিক তা নয়। বাংলায় লিঙ্গ বলতে যা বোঝানো হয় তা হলো শারীরিক গঠন অনুযায়ী সে ছেলে না মেয়ে তা। লিঙ্গ (Sex) নারী ও পুরুষের শারীরিক পার্থক্য নির্দেশ করে। ‘জেন্ডার’ সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট নারী-পুরুষের মধ্যকার পার্থক্য নির্দেশ করে।
ছেলে ও মেয়েশিশু উভয়েই সমান সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে এবং তারা সব ধরনের কাজই করতে পারে। শুধুমাত্র শারীরিক কিছু পার্থক্য ছাড়া ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকেনা। শারীরিক গঠনের কারণে ছেলেরা প্রাকৃতিকভাবে পুরুষ লিঙ্গে অবস্থান করে। আর মেয়েরা প্রাকৃতিকভাবে অবস্থান করে নারী লিঙ্গে। প্রকৃতিই নারী পুরুষের এই যৌন ও প্রজনন অঙ্গগত পার্থক্য তৈরি করেছে। শারীরিক এই পার্থক্যের কারণে মেয়েরা সন্তান জন্ম দিতে পারে অন্যদিকে ছেলেরা ভ্রুণ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। প্রকৃতিগত এই পার্থক্যকে ভিত্তি করে সমাজে ছেলে আর মেয়ের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা গড়ে ওঠে। সামাজিকভাবে আরোপিত ছেলে-মেয়ের এই পরিচয় ও তাদের ভূমিকাকেই জেন্ডার বলে।
জেন্ডার হলো নারী-পুরুষের এবং ছেলে-মেয়ের বৈশিষ্ট্য, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিচিতি, ভূমিকা অর্থাৎ সমাজ ও সংস্কৃতি নারী পুরুষকে যেভাবে দেখতে চায় জেন্ডার তারই প্রতিফলন। জেন্ডার কথাটি দ্বারা নারী-পুরুষের মধ্যকার সমাজসৃষ্ট পার্থক্যসমূহকে চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ জেন্ডার হলো সমাজসৃষ্ট নারী-পুরুষের সম্পর্ক, যা সমাজে বসবাসরত নারী ও পুরুষকে মেনে চলতে হয়। পরিবারে ও সমাজে, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় অনেক সময় ছেলে ও মেয়ের মধ্যে এমন কিছু সামাজিক পার্থক্য তৈরি করা হয় যা বৈষম্যমূলক। ছেলে ও মেয়ের এই সামাজিক পার্থক্য পরিবর্তন করা যায়।
ছেলে ও মেয়ের ব্যাপারে সমাজে প্রচলিত কিছু কথা নিয়ে আমরা ভাবতে পারি। এগুলো হলো
- ছেলেরা সবার সামনে কাঁদবে না, মেয়েদের চেয়ে শক্তিশালী ও সাহসী হয়। যৌনতার ব্যাপারে সবকিছু জানবে, ছেলেদের সাহায্যের জন্য কারো কাছে যেতে হয় না।
- মেয়েরা যৌনতার ব্যাপারে সবকিছু জানবে না, শান্ত ও নরম স্বভাবের হবে, সহিষ্ণু ও যত্নবান হবে, ছেলেদের প্রেমের প্রস্তাব দেবে না, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে পরিচ্ছন্ন ও গোছানো হবে।
আসলে ছেলে ও মেয়ের সর্ম্পকে ভিন্ন ভিন্ন যে বিবৃতি প্রচলিত, তা অনেক ক্ষেত্রেই যৌক্তিক ও যথার্থ নয়। প্রকৃতি এসব ঠিক করে দেয় না। একজন ছেলে যেমন শক্তিশালী ও সাহসী তেমনি একজন মেয়েও শক্তি ও সাহসের পরিচয় দিতে পারে। এটা নির্ভর করে কোন পরিবেশ, সুযোগ ও ব্যবস্থার মধ্যে ছেলে শিশু বা মেয়ে শিশু বেড়ে উঠেছে। প্রকৃতি শুধু প্রজননের ক্ষেত্রে অর্থাৎ সন্তান ধারণ, সন্তান জন্মদান ও সন্তানকে বুকের দুধপানে নারীর ভূমিকা বা কাজকে নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর বাইরে ছেলে ও মেয়ে তথা পুরুষ ও নারী সকল কিছুই সমান ভাবে করতে পারেন।